বিশেষ সাহিত্য সংখ্যা: বাংলার জনরব শারদ অর্ঘ্য ১৪৩২

কবি আঞ্জু মনোয়ারা আনসারীর দুটি কবিতা
১.
স্বপ্নীল সরোবর
আনন্দ মুহূর্ত এক সূক্ষ্ম কণা মাত্র!
দিনশেষে সন্ধ্যা নামার মতো কিম্বা স্বপ্ন।

রাত বাড়তে থাকে মুহূর্ত ফিকে হয়
বিলীয়মান আলোর ভিতর;
ঘুম ভাঙতেই অপর্যাপ্ত স্বপ্নের
খেই খুঁজে পাওয়া যায় না।
কি পেয়েছি, কি না পেয়েছি,
জীবনের যাপনে! অদ্ভুত রহস্য ময়তায়
মৃত্যু অনিবার্য! তবুও,
তবুও আনন্দ-কণা কষ্টের ফেরিতে
পাওয়া না পাওয়ায় নিঃশব্দ আনন্দ রেণু
জড়িয়ে থাকে অনন্ত মায়ায়।
আনন্দ মুহূর্ত এক সূক্ষ্ম কণা মাত্র!
দিনশেষে সন্ধ্যা নামার মতো কিম্বা স্বপ্ন।
রাত বাড়তে থাকে মুহূর্ত ফিকে হয়
বিলীয়মান আলোর ভিতর;
ঘুম ভাঙতেই অপর্যাপ্ত স্বপ্নের
খেই খুঁজে পাওয়া যায় না।
কি পেয়েছি, কি না পেয়েছি,
জীবনের যাপনে! অদ্ভুত রহস্য ময়তায়
মৃত্যু অনিবার্য! তবুও,
তবুও আনন্দ-কণা কষ্টের ফেরিতে
পাওয়া না পাওয়ায় নিঃশব্দ আনন্দ রেণু
জড়িয়ে থাকে অনন্ত মায়ায়।
মধ্যগগনে সূর্য দেব! মধ্যাহ্ন উৎসব আঙিনায়!
তখনও প্রদীপটায় সলতে পুড়ছে আনন্দ প্রজ্বলনে।
দিক দিগন্তে আবহমান বাতাস,
মহালয়ার মন্ত্র পাঠ, দেবীপক্ষের আরাধনায়,
যে,, শব্দ উৎসবের সূচনা তোমার কমনীয় আঙুল ছুঁয়ে,
নিগূঢ় সান্নিধ্যে কবি লোক সে মহৎ আলয় উদ্ভাসিত।
কবি’রা কবিতা পড়ছে চিরন্তন শব্দের বিনুনী বেয়ে!
ঠিক তখন, ঠিক তখন কোথাও,
কোথাও একান্তে, একক সিক্ততায়
একতারায় সুখ আকঁছে পর্যাপ্ত
কবিতা বিলাস স্বপ্নীল সরোবরবুক।
মধ্যগগনে সূর্য দেব! মধ্যাহ্ন উৎসব আঙিনায়!
তখনও প্রদীপটায় সলতে পুড়ছে আনন্দ প্রজ্বলনে।
দিক দিগন্তে আবহমান বাতাস,
মহালয়ার মন্ত্র পাঠ, দেবীপক্ষের আরাধনায়,
যে,, শব্দ উৎসবের সূচনা তোমার কমনীয় আঙুল ছুঁয়ে,
নিগূঢ় সান্নিধ্যে কবি লোক সে মহৎ আলয় উদ্ভাসিত।
কবি’রা কবিতা পড়ছে চিরন্তন শব্দের বিনুনী বেয়ে!
ঠিক তখন, ঠিক তখন কোথাও,
কোথাও একান্তে, একক সিক্ততায়
একতারায় সুখ আকঁছে পর্যাপ্ত
কবিতা বিলাস স্বপ্নীল সরোবরবুক।
২.
ফিরে দেখা–
রাতভর মনের ঘরে আকুল অস্থিরতা
কদমের বিজন শাখে শিশিরের
ফোঁটায় আমার আমিকে দেখতেই
স্রোতে ভেসে যাচ্ছে, আদ্যাপান্ত শরীর।
পুবের নীলিমায় আলতো ভোর
তোমার গানের শিখায় প্রাণের স্ফুরণ
নীলকন্ঠের ওম ঠোঁটে তমাল বীজপত্র
মহাশূন্যে তুমি অমল কান্তি।
“আমার যা কিছু ভালো তুমি তাই করে দাও
আমি কিছু জানিনা
আমার হাত ধরে নিয়ে চলো সখা
আমি পথ চিনিনা”…!
সবুজের মেঠো আলপথে জননী ফিরছে
একমুঠো মাধুকরীর করীতে!
আসন্ন মহৎ আলয়ে আনত সুর–
বাজলো, বাজলো আলোর বেণু
আমার ফিরে দেখা–
শিলং পাহাড়ের মর্মর দুপুর
ময়ুরাক্ষীর কাশ ছুঁয়ে জল আয়নায়
পুরাতন আমি,, নতুন আলো মাখছে।
কবি গৌতম বালা’র দুটি কবিতা
১.
যোগফল শূন্য
সূর্য -চাঁদের ডোবা ওঠার মতো
আমার কোনো নতুন-পুরোনো নেই
প্রতি মুহূর্তে জন্ম আমার
আমাকে জন্মাতে হয়
মানুষের অবিনাশী মৃত্যুর মতো
আমার আবছা কুয়াশা চোখ লেখে
আবহমান মানুষের সুখ দুঃখের গীতিকাব্য
ভেজা চোখের উঠোন জুড়ে
বারোমেসে অপুষ্ট শব্দের ছড়াছড়ি
সব কিছুতে ভীষণ অন্ধকার
অদৃশ্য দেবতার বাণী
ঘিরে রাখে বর্তমান ভবিষ্যৎ
ঘন অন্ধ-অতীত মৃত্যু-গুহা তার
উপত্যকা জুড়ে সাদা কথার উপনিবেশ
দানের অজস্র হাতে
নির্লজ্জ সব কেড়ে নেবার হুমকি
তীব্র আলোর ঝলক মাদকতা আনে
চৌচির দর্পণে ফোটে
অবয়বহীন বিচিত্র মুখোশ মানুষ
অধিকার লোপ
ভবিতব্য যদি সাধারণের
তবে কেনো– কীসের নতুন বছর
কেনোই বা অভিনন্দন শুভেচ্ছা কামনা
তাই অচেতন
শিক্ষাবিহীন অনালোক পৃথিবীর
ধুলো মাখা কচি ঘাস বনচাঁড়ালের
কি-ই বা নতুন আর পুরোনো দিবস!
২.
এমনই দস্তুর
অধরা স্বপ্ন নিয়ে যুগান্তের পথিক চলে একা
চলেছিল অ্যামিবার মতো সৃষ্টির প্রথম প্রহরে
নিজেই নিজের শরীর ভেঙে ভেঙে
এখনও চলে, নিঃসঙ্গ দৃষ্টির অগোচরে
দলের ভেতরে থেকেও মুদ্রাদোষে বিমূঢ়
তার আমি অন্ধকারে মুড়ে রাখি জীবনের বীজ।
কুয়াশার চাদরে গোপন, চির কিশোর হেমন্ত
কোন এক শীতের রাতে, বুকের পেষণে বুক
রেখেছিলে আবহমান সৃষ্টির প্রথম নিঃশ্বাস।
অনন্ত জীবনের পূত-পবিত্র ক্ষণিকের স্বাদ
ভেতরের পিষ্ট বকুল গন্ধ আসে না আর
মাঝির কপালে, জলের কোঁচকানো রেখা নেই।
গহ্বর থেকে প্রতি প্রহরে শুনি শেয়াল ডাক
সারা রাত তারাদের দিকে চোখ রেখে
আর্ত মানবী কাঁদে বিরহী শকুনের মতো
প্রিয় তার সেই কবে ছেড়ে গেছে ঘরবাড়ি
ভোরের গন্ধ মেখে দুপুর পার করে একা
পথেই বিকেল নামে, দু’একটা সন্ধ্যার দীপ দূরে
নিভে যায়, সময় কাটে, যুগান্তের আলো মলিন
সুগন্ধি বাতাসে পোড়ে বাতি ধূপ ধোঁয়ায় ভেতরে।
কবি সেখ আজমত হক এর দুটি কবিতা
১.
চলো পাল্টাই
জীবনটাকে নিংড়ে
একটা “মানুষ” বার করতে ইচ্ছে করে
এতো ময়লা জমেছে মনে
কচুরি পানা জীবন
উদ্বাস্তু শোণিত স্রোত
পরিযায়ী হৃদয় খুঁজে ফেরে ঠিকানা
সম্ভ্রান্ত পাপের দল,কষে বাঁধতে চায়
ক্ষুধার্ত হায়না রিপুর উৎকট সঙ্গীত
বিভূঁই সান্ত্বনা
সবই দেখি মেকি
মুখ হারিয়েছে মনের ঠিকানা
সাজতে সাজতে আসল মুখ কোথায় গেলো হারিয়ে
জীবনের যুপ কাষ্ঠে প্রতিশ্রুতির বলী
শ্রাদ্ধের মেনু কার্ডে পলান্ন পোলাও
কাকের মুখে দেখি মানবের অস্তি খন্ড
জাতের মাথায় রাবণ সাজ,
এসো পরি মানব সাজ !!
সবার দেশে ফাগুন আসুক,গোমুখ ঝর্ণা ধরায়,
একটা সূর্য উঠুক এবার , অন্ধকারের পাড়ায় !
২.
পূর্ণ ছেদ
থেমে গেলে
তুমিই বলবে হেরে গেলাম !
আসলে কি জানো …
হারতে হারতেই মানুষ বেশি শেখে!
শুধু প্রাণ ত্যাগ করে ,
হারতে চাই না আমি !
মৃতপ্রায় জীবন চাই না,
চাইনি কখনও !
রক্তাক্ত পিচ্ছিল নদীতে দাঁড়িয়েও –
আমি জীবনকে ভালোবেসেছি !
রুক্ষ মরুভূমির গন্ধ গায়ে মেখে –
গোলাপের সৌরভ আকন্ঠ পান করেছি !
তোমার সুগন্ধের মাদকতায় বাঁচি আমি!
তাতে কাঁটা তো থাকবেই !
নুনকে বুকে ধারণ করেছে বলেই তো —
আজ সে সাগর;
ক্ষুদ্র পুকুরে সে নিমজ্জিত করেনি তার অস্তিত্ব !
এই যে সূর্য ওঠে, এ কেবল আমার
জোছনায় স্বপ্নজাল বুনি আপন মনে
আকাশে তারা হয়ে ভাসি –!
শুধু আমি একা !
শেষ নিঃশ্বাসেও তো –
বেঁচে থাকি !!
এ আমার অহংকার !
তারপর –
যেও ভুলে ,
তবু তো জানবে আত্মা… থেমে যায়নি!
সেই হোক সফলতার পূর্ণ ছেদ !!
কবি আরেফা গোলদার এর দুটি কবিতা
১.
ক্ষয়িষ্ণু জীবন
নিজেকে বিলিয়ে দিতে দিতে
ক্ষয়ে যাওয়া জীবনটা ক্রমশ
বিন্দুতে মিশে গেলে –
পরিস্ফুট হয় অমোঘ সত্য!
জীবন আসলেই আপেক্ষিক,….
প্রয়োজনের নিরিখে প্রিয়জনের গুরুত্ব জমা থাকে….
শেষ বিকেলটা দ্যুতি ছড়ায় না –
শুরু হয়না নতুন উদ্যম
শুধু নীড়ে ফেরার গল্প লেখা থাকে ডানায়।
আপেক্ষিকতার উর্ধ্বে উপেক্ষাগুলো সহসা একদিন পাখি হয়ে যায়…
২.
স্বাধীনতার নিরুত্তর সকাল …..
এক
সকাল হতেই পাড়ার ক্লাব থেকে একটানা ভেসে আসছে দেশাত্ববোধক গান। প্রায় আট’টার দিকে পতাকা উত্তোলিত হলো।ভাষণ আর প্রতিশ্রুতির বর্ষণে করতালিতে আপ্লুত পাড়ার সবাই।
টাটকা ফুলের মিষ্টি গন্ধে ভেসে যাচ্ছে ঘরটা…
মেয়ের ছবিটার সামনে স্থির বসে আছেন এক বিষণ্ণ মা…
যে আগস্ট সারা ভারতবাসীর গর্বের মাস, সেই আগস্টই সাক্ষী থাকলো মেয়ের নির্মম ইতিহাসের।রাতারাতি পরিচয় পাল্টে গেলো।
ডাক্তারদিদির মা থেকে তিনি এখন ধর্ষিতার মা……
দুই
কমিউনিটি হলের সামনে পতাকা উত্তোলনের পর পর পাড়ার কচিকাঁচার দল দেশাত্মবোধক গান, আবৃত্তি নিবেদন করে চলেছে। পাঁচ বছরের ছেলেটা বাবার কাছে বারবার আবদার করছে সে’ও আবৃত্তি করবে। কিন্তু একত্রিশের নির্বিকার বাবা হতাশায় দু ‘ হাত দিয়ে মুখ চেপে আছে কেন সে বুঝতে পারছে না।
ছাব্বিশ হাজারের সাথে তার বাবারও চাকরি টা চলে গিয়ে বাবার যে হারিয়ে গেছে স্বাধীনতা…
বাবার. কাছে এখন সবটাই অন্ধকার….
তিন
বছর পঁয়বষট্টির মানুষটির নদী ভাঙ্গনে তলিয়ে গেছে ভিটে মাটি ,জমি – জিরেত, টিনের বাক্স….. বেঁচে থাকার যাবতীয় আয়োজন।
চারটে দিন পেরিয়ে গেলো ত্রাণের শিবিরে।মাথার ছাদ হারিয়ে তিনি নির্ঘুম –
মাঝে মাঝেই বিহ্বল হয়ে তাকিয়ে থাকেন তলিয়ে যাওয়া বাড়ি লক্ষ্য করে।
তাঁর স্বাধীনতা সংগ্রামী বাপ এই মাটি ভালোবেসে মাটি আঁকড়ে জীবনপাত করেছেন, তারও জন্ম এই বাড়িতে।
কিন্তু নতুন সরকারি নিয়মে কিভাবে সে প্রমাণ করবে সে আদ্যোপান্ত ভারতবাসী…
শিবিরের তিরঙা পতাকার দিকে ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে থাকে অসহায় ভাবে….
কবি সুভাষ চন্দ্র ঘোষ এর দুটি কবিতা
১.
কৃষ্ণাষ্টমী
চারিদিকে অনাচার গাঢ় অন্ধকার
মথুরায় সিংহাসনে অত্যাচারী কংস,
অগোচরে জন্ম নেন বসুদেব বংশ
দেবকী মাতার গর্ভে বিষ্ণু অবতার।
কৃষ্ণপক্ষের অষ্টমী ঘোর কারাগার
রোহিনী নক্ষত্রে তিথি দুর্যোগের অংশ
ভগবান আবির্ভাবে অত্যাচারী ধ্বংস
উত্তাল যমুনা নদী কষ্টে পারাপার।
বসুদেবের মাথায় সদ্য শিশু ক্ষীণ
নন্দ যশোদার গৃহে আনন্দের বান,
বৃন্দাবনে আজ বড় সুখময় দিন
ধরাধামে আবির্ভূত কৃষ্ণ ভগবান।
উচ্চ নীচ শত্রু মিত্র ভেদাভেদ হীন
আপামর ভক্ত জন পান কৃপা দান।
২.
জীবনখাতার পাতা
বর্ষার ঘন সবুজ গাছের মতো কথা
অমাবস্যা কালো রাত্রির মতো ব্যথা,
সুগন্ধী গোলাপ পাপড়ির মতো লাল
ভোরের কোল থেকে উঠা সূর্য সকাল।
বসন্তের মাতাল করা মৃদুমন্দ হাওয়া
ফুলেফুলে মৌমাছির গুনগুন গাওয়া,
মিষ্টিমধুর ছোটবেলার কত খেলাধূলা
ছেঁড়াছেঁড়া স্মৃতিগুলো যায় কভু ভোলা?
কৈশোরের সোনা মাখা স্বপ্ন মায়াজাল
যৌবনে মেঘভাঙা বর্ষণে সব বেসামাল,
সংসারের অলিগলি খোঁজ সোনার হরিণ
অজান্তে কখন যে আসে বার্ধক্যের দিন ।
অশক্ত শরীর মনে শুধুই স্মৃতির রোমন্থন
পাকা ফলের মতো খসে যাবে মায়া বন্ধন,
সাত রঙের আলোয় ভরা জীবনের রবি
খাতার পাতায় পাতায় রঙবেরঙের ছবি।
কবি কৃষ্ণা গুহ’র দুটি কবিতা
১.
কবিতার পথ
বলতে পারো কবিতা!! আর কতটা পথ পার হলে ভালবাসার উঠোনে পৌঁছানো যায় ?
আর কতটা এগুলে ধূসর অভিমান গলে কবিতা হয়ে যায় !!
যেদিন আমার কবিতা তোমায় ছুঁয়েছিল তোমার কন্ঠে কত সাবলীল পাঠ ,
সেদিনই তো ছুয়েছিলাম মনের গহীন হাট।
কবিতার বন্যায় ভাসিয়েছিলাম আমার প্রথম প্রেম কবিতা কোলাজ ।
কবিতা বাসরে স্বপ্ন কাজলে এঁকেছিলাম কাজল নয়না হরিণী!!
অতল সমুদ্রে ডুব দিয়ে এনেছিলাম আমার প্রেম মাখা কবিতার খাতা!!
কতটা ভালোবাসা জমেছিল কবিতার জন্য!!
কবিতা স্পর্শ করেছিল তোমার অন্তরের ব্যথা। কত জমানো স্বপ্নকথা জমাট বেঁধে ছিল কবিতায় অজান্তে।
শব্দে শব্দে গেঁথে ছিলাম মালা ।
প্রেম মাখা ঝলমল রোদ্দুরে কবিতা
বিছিয়ে ছিলাম মনের চাতাল জুড়ে ।
কবিতা তুমিই দেখালে পথ !!
কতটা আঁধার পার করে মনের কালিমা মুছে আলোর বন্যায় গা ভাসানো যায় !!
কবিতা তুমি দেখালে পথ !!
কতটা পথ পার হলে ভালবাসার উঠোনে
পৌঁছানো যায় !!
কবিতা তুমি দেখালে পথ।
২.
এলোমেলো ভাবনা
ভাবনা গুলো আজ বড্ড এলোমেলো!!
যেন সেই ছোট্ট পাহাড়ে ফেলে আসা সোনালী দিনগুলো।
কোচর ভরে আম কুড়ানো ,কুলের আচার, পুতুল খেলা সবই তো আজ গল্প কথা।
অভিমানে ব্যথায় তীব্র দহনে জ্বলছে একা!! মায়ের শাড়ি, বউ সাজা, হাঁস চৈ চৈ দুপুরবেলা, মনে পড়ে সবই ছিল সহজ সরল ,
জীবনটা ছিল সাদামাটা।
বেদনার নোনা জলে বুক জমিনে আজও সেসব দীপ্তমান ,
ধিক ধিক করে জ্বলে!!
পরিণত সম্পর্ক গড়ে ওঠার আগেই ঢলে পড়ল দিগন্তে অস্তরাগে!!
জীবন রাঙাতে নিজেকে উজাড় করে শান্তির চাতালে গেয়ে উঠে শান্তির গান ,পাখিদের কলকাকলিতে ভরে ওঠে শান্তির সকাল।
বিষাক্ত বিষে জর্জরিত আর নয় !!
ভালোবাসার চিরন্তন সত্য কে নিয়ে এগিয়ে চলা !!
এ যেন এক ঝাক বুনোহাঁস পথ হারিয়ে ঘরে ফেরা।
কবি আলমগীর রাহমান এর দুটি কবিতা
১.
সংজ্ঞায়িত ভালোবাসা
ভালোবাসি যাকে– তার ভালো-তেই বাস,
ভালো না থাকে যদি–
উচ্চস্বরে ভালোবাসি ভালোবাসি করে কী লাভ!
ভালো বাসাবাসি-তে যেখানে সন্দেহের অবকাশ,
বাসা বদল,বদলি বসত;ভালোবাসার মানুষগুলো খুব ভালো থাক।
সংজ্ঞায়িত হোক ভালোবাসা– আশ্বস্ত,মুক্ত,স্বাধীন,
ইচ্ছে ডানা,উদার আকাশ, স্বপ্ন পূরণ,
জীবন-আনন্দের আহ্বান।
২.
ঘামে ভেজা জীবন
ঘামের ঘ্রাণে ম ম শ্রম,
শতছিন্ন টি সার্ট ভিজে চপচপ।
শ্রমজীবীর চোখের জল,
বৃষ্টি স্নাত!না,দৃষ্টি ভ্রম।
সস্তার শ্রম,দরাদরির নিত্য জীবন,
গতর ঘামলেই মেলে ছিটেফোঁটা সুখ।
দিন আনা দিন খাওয়া শ্রমজীবন,
আমানি ঠেলে তবেই পান্তার মুখ।
গাদাগাদি ঠেলাঠেলি নিত্য সওয়ারি ট্রেনে-বাসে,
ঘামের গন্ধের ঘৃণায় সহযাত্রী নাকে রুমাল চাপে।
নির্বিবাদের প্রাত্যহিক জীবন এভাবেই চলে যে ব’য়ে!
দু’বেলা দু’মুঠো ভাতের স্বপ্ন দু’চোখে শুধু ভাসে।
কবি শর্মিষ্ঠা মাজি’র দুটি কবিতা
১.
এসো শরৎ সুন্দরী এসো হেমন্তিকা
এসো এসো শরৎ সুন্দরী
এসো শিউলি রাঙা শাড়িতে,
তুমি এলেই বাজবে পুজোর ধুন
গ্রাম শহরের সব বাড়িতে।
তোমার পরেই আসবে ছুটে
সোনালি শাড়ির হেমন্তিকা,
মাঠে মাঠে পাকা ধানে
গাইবে বুলবুল মধু গীতিকা।
আহা হেমন্তে খেজুরের মিষ্টি রস
জীভে আনে নোলা টসটস,
ওগো শরৎ সুন্দরী ওগো হেমন্তিকা
ঢালো ঢালো অঢেল আনন্দোচ্ছাস।
২.
অথৈ
তুমি অথৈ দয়ার সাগর
আমি ছোট্ট নুড়ি,
তোমার মত মানব সেবা
করতে আমি পারি?
তোমার পারে ছোট্ট নদী
সদা অপেক্ষায় থাকি
তোমার সাথে বিলীন হতে
করি ডাকাডাকি।
যেদিন তুমি খুলে দেবে
তোমার রুদ্ধ দ্বার
সেদিন আমি আসব ছুটে
লক্ষ কোটি বার।
তোমার জ্ঞানের অথৈ সাগর
কেমনে হবো পার,
দাওনা বলে ওগো দয়াময়
পথ নাই যে আর!
কবি শেখ সিরাজ এর দুটি কবিতা
১.
শরৎ আমার
শরৎ এলো নতুন সাজে
পড়লো ঢাকে ঘা
নীল আকাশের সাদা ভেলায়
আসছে বুঝি মা।
নতুন সুখের আলোয় মেতে
উঠলো সারা দেশ
ধর্ম বর্ণ বিভেদ ভুলে
খুশির পরিবেশ।
সাজলো আকাশ সাজলো বাতাস
সাজলো দূরের মাঠ
দিঘির জলে পদ্ম ফুলে
ভরিয়ে দিলো ঘাট।
সাজলো সবুজ মাঠের পাশে
সাজলো পাহাড় বন
নতুন পোশাক ভরিয়ে দিলো
শিশুর অবুঝ মন।
খুশির আলোয় এক হয়ে যায়
হিন্দু মুসলমান
শরৎ আমার শরৎ সবার
দুগ্গা মায়ের দান।।
২.
দেবিকা
দেবিকা ; অপরূপা
লাবণ্যে, কৌলিন্যে সাধিকা।
কেশ রাশি দুলিয়ে দুলিয়ে
যায় সে যখন পথে হেঁটে
মনে হয় পূজারিণী
চলেছে একাকিনী
যেন বরষার নদী
তরঙ্গায়িত অঙ্গ শোভা
অনন্যা রূপসী
চোখে লুকানো অবলা দৃষ্টি
যেন সে কবির কবিতা
ছন্দ লতায় সদ্য সবিতা
অরুণ আভায় রঞ্জিত মুখমন্ডল
চকিত – চপলা,সে অতি চঞ্চল।
দেবিকা ! চলেছে একা
হয়ত কোন দেবালয়ের সেবিকা।
কবি নাসিমা বেগম বুলু’র দুটি কবিতা
১.
পূজোর আনন্দ
শিউলি শাখে মুনিয়া ডাকে
পূজোর আনন্দে
মহিলা ঢাকি বাজায় ঢাক
তালে ছন্দে ছন্দে ।
মায়ের পানে তাকিয়ে থাকি
অপলক আমি
আমায় ধরে আদর করে
ছোট্ট সোনা বামি ।
লেজটি তুলে সারমেয় চলে
মন্ডপের দিকে
বাঘের মাসী দেদার খুশী
দুগ্গা মাকে দেখে ।
ঢাকের তালে লেজটি তুলে
হেলেদুলে চলে
পূজোর গন্ধে মানুষ জন
যায় দুঃখ ভুলে ।
নতুন জামা পরে সবাই
দেখতে যাবো ঠাকুর
মহিলা ঢাকি বাজায় ঢাক
ঢ্যাং কুরা কুর কুর ।
২.
প্রণাম বিদ্যাসাগর
জন্ম তোমার ছাব্বিশে সেপ্টেম্বর
মেদনিপুরে বীরসিংহ গ্ৰাম,
পিতা ঠাকুর দাস বন্দ্যোপাধ্যায়
ভগবতী দেবী মাতার নাম ।
গ্ৰামের পাঠশালা শেষ করে
বাবার সাথে এলে কলকাতায়,
তখন তোমার বয়স বছর আট
পড়াশুনার করবে বলে ।
আলোর অভাবে রাস্তার গ্যাসের
আলোয় করেছো পড়াশুনা ,
করেছ উচ্চ ড্রিগ্ৰি লাভ,
পেয়েছো চাকরি অধ্যাপনার ।
তোমার মাতৃভক্তির কথা
ভুলতে পারিনা আমরা,
বিধবা বিবাহ করেছো প্রচলন
হয়ে নারী শিক্ষার প্রাণ ভোমরা ।
তুমি বর্ণপরিচয়, বোধদয়,
ভ্রান্তিবিলাস, সীতার বনবাস,
সমাজ সংস্কারক ভাষা সাধক
বেতাল পঞ্চবিংশতি ।
তোমার পরনে সাদামাটা পোষাক
শিক্ষা আকাশ ছোঁয়া,
ঢাউস ছাতা মাথায়
করেছ কলেজ আসা যাওয়া ।
তোমার শকুন্তলা পড়েছি বারবার
তুমি আছো মোর স্মরণে মননে,
তুমি আমার প্রাতঃস্মরণীয়
তোমায় জানাই প্রণাম অনিবার ।
কবি মানিক হাজরার দুটি কবিতা
১.
মায়ের পুজো আগত দ্বারে,,
মায়ের পুজো আর দেরি নেই, খুবই কাছাকাছি,,
আসুক পুজো আগের মতই আমি অপেক্ষায় আছি।
আমি যে এক খুব সাধারণ, নেই কোন যশ মান,
তবুও পুজোয় মেতে আমি, গাবো আগমনী গান।
নেই আমার রূপের বাহার, নেই কোনো পরিপাটি,
মলিন পোশাকেই দেখবো পুজো, আমি বাঙালি খাঁটি।
দারিদ্রতা সাথী আমার, ছন্নছাড়া এ জীবন,
এই পৃথিবীর পান্থশালায়, আমি অতিথি কিছুক্ষণ।
আমি স্বাধীন স্বাধীনই রবো, পরাধীন কভু হবো না,,
কায় মনে দেখব পুজো, অনাচারে ডুবে যাবো না।
এসব ভুলে মায়ের পুজো, দুচোখ ভরে দেখবো,,
আর কাঁচা হাতে মায়ের গাথা, গদ্যে পদ্যে লিখবো।
সাধ জাগে সেই আগের মতো, কৈশোরে ফিরে যাই,
কিশোর আমেজে দেখি পুজো, তার উপায় যে নাই।
২.
আমার মননে মায়ের পুজো
পুজোর সেরা দুর্গাপুজো, নানা ময়োতায় মাখা,
পাঁচদিন দিন অনন্য পুলকে, বিভোর হয়ে থাকা।
তবুও এই পুজো অনেক সুখে দুখে ভরা,
কারো মুখে হাসির ঝলক, কারো রোদন ভরা।
যাদের আছে অনেক কিছু, পুজো যেন তাদের,
দীন হিন ভিখারী যারা, কোথায় পুজো ওদের?
ধনীর দুলাল পোশাকে তার, কতনা পরিপাটি,
গরিব শিশুর ছেঁড়া পোশাক, হাতে ভিক্ষের বাটি।
কতজন পূজোর আনন্দে, হৈ-হুল্লোড়ে মাতে,
অনেকের এই পুজোতে, খাবার জোটে না পাতে।
তবুও ওরা সকল ভুলে, পুজোর খুশিটা লোটে,
অনাহারে শুকনো মুখেও, আনন্দের হাসি ফোটে।
ওরা নাচে ওরা গায়, পুজোতেও মেতে রয়,
কোথাও কোথাও ওদের পাড়াতে, মায়ের পূজো হয়।
এসো, ওদের সাথে এমন পুজোর খুশিতে মাতি,
বৃথায় যেন যায় না ওদের,, পুজোর মাতামাতি।
যুগের যুগের এমনই ছবি, বদল আজও হলো না,,
ওরা যেমন ছিল তেমনই আছে,মর্যাদা কিছু পেলো না।
কবি বিমলেন্দু চক্রবর্তী’র দুটি কবিতা
১.
শারদনবমী
কামিনী ফুলের সৌরভ ছড়িয়ে
পার্কস্ট্রীটের মোড়ে,
পাশে তুমি, সাথে সাথে আমাদের
আদরের মেয়েটি ,
শুক্লানবমীর শারদ চাঁদের আলো
আকাশের গায়ে,
এই দৃশ্য হয়তো’বা ক্ষণিকের ,
প্রবাসের এইটুকুই ,
এই সুমধুর আবেশ, দিলাম
তোমাকে কবিতার
আছিলায় চলে যাবার আগে
দৃশ্যান্তরে।
২.
এলো শরৎ
দুরন্ত কাশবন হাওয়া উচাটন
মেঘ খানখান ভাসে আনমন,
আবার বোধন ফিরে আগমন
কবে যে কখন এসেছে প্লাবন,
নদী ভরা বান দুঃখ অকারণ
ক্লেদাক্ত যাপন ভাবনার দহন,
কোথাও ক্রন্দন নিকানো উঠোন
হৃদয়ের স্মরণ অসময়ে এখন,
শরত অন্বেষণ শিউলির পবন
নত উষ্ঞায়ন নবরাত্রি কথন,
আলোর ভুবন সেজেছে এখন
ঢাকের বাদন দুলে কাশ মন,
উৎসবে চন্দন মানবিক ঘ্রাণ
সময় সমীরণ কবির জীবন,
হবে অবসান নিথর একদিন
এই আলিঙ্গন অক্ষয় চিরন্তন,
মনের উচাটন ছুঁয়ে কাশবন
স্বচ্ছ নিদারুণ শান্তি অনুক্ষণ ।
কবি সেকেন্দার সেখ এর দুটি কবিতা
১.
তুমিও কলের পুতুল
মা, তোমাকেও বানালে ওরা দাবার বোড়ে
ভোটের কলকাঠি কলের পুতুল!
অসুরকে বধ করতে যে তোমায়
এনেছিল মর্তে পুরাণ মতে,
এবার তারই জৌলুস আলয়ে
ঠাঁই পেলে তুমি ভক্তের চাণক্য চাতুরিতে!
জ্ঞাণীগুণিকে ব্রাত্য করে দিকে দিকে
চমকদার সেলিব্রেটি দিয়ে ফিতে কেটে
উদ্ঘাটন হলো তোমার দুয়ার,
সাড়ম্বরে করলে উন্মোচন
শ্রেষ্ঠ সেবকের নামাঙ্কিত দ্বার।
জয়ধ্বণিতে মুখর হলো আকাশ বাতাস
উদ্বোধক আর সেবকের নামে,
ঝরে পড়া তোমার হা হুতাশ আর দীর্ঘশ্বাসে
বিচলিত হলো নিরালায় নিরহঙ্কার ভক্তের মন।
মা,রিমোটকন্ট্রোলেও উদ্বোধন হলো
তোমার শতশত মন্ডপ,
ভোটপুজোর মহা সংগ্রামের সাক্ষী হলো
আপামর ভক্তের দল,
জরিপে মত্ত হলো প্রচার মাধ্যম
রিক্টারস্কেলে জনপ্রিয়তার কম্পন।
তুমি কি কখনো কল্পনা করেছিলে মা,
আলোর যাদুকররা ভেল্কি নাচ নাচাবে তোমায়,
যেমন নাচাবে তেমনই নাচবে
কলের পুতুলের মতো?
(২.)
সম্পর্ক
সম্পর্ক, কোন মাহিন্দ্রক্ষণে জন্ম তোমার!
সম্পর্ক ভাঙাগড়ার যাদুকর তুমি,
তোমার যাদুতেই সমগ্র জীবকুলের
অস্তিত্ব এই ধরাধামে।
প্রেমিক প্রেমিকা স্ত্রী পুত্র কন্যা
সবাইকেই তুমি করে চলেছ
নিরন্তর ধন্য ধন্যা,
তুমি না থাকলে তন্ত্রমন্ত্র সবই
হয়ে যেত অর্থহীন এই পৃথিবীতে।
জমিনে শূন্যে মহাশূন্যে গ্রহনক্ষত্রে
প্রযুক্তিতে বিজ্ঞান যতই
দাবি করুক অদৃশ্য সম্পর্কের,
আসলে সবখানে তোমারই কারিশমা,
মানুষ পশুপাখি সবারই উৎসমূলে তুমি।
আদি-অন্ত সমগ্র চরাচর কৃতজ্ঞ তোমার কাছে,
ধন্য সম্পর্ক ধন্য
আলো বাতাস আকাশ মহাকাশ
কৃতজ্ঞ তোমার জন্য।
আনন্দধারার অদৃশ্য মহিমাতেও
তুমি বিরাজমান,
অগণিত অনুগামীর মনের মণিকোঠায়
তুমি প্রেরণার যাদুকাঠি,
অন্ধজনের তুমি প্রেরণার লাঠি।
খাদ্য অন্বেষণে পাখিরা দিনভর
পরিভ্রমণ শেষে সন্ধ্যায় নীড়ে ফেরে
তোমারি প্রেরণায়,
যাদের প্রেয়সীরা থাকে অধীর অপেক্ষায়।
আমার মন মুসাফির তুমি,
তোমার সৌজন্যেই গড়ে চলেছি
সম্পর্কের সেতু নিরলস,
ইতর প্রাণী সবার তুমি প্রেরণার আকাশ।
___________________________সম্পর্কের,
আসলে সবখানে তোমারই কারিশমা,
মানুষ পশুপাখি সবারই উৎসমূলে তুমি।
আদি-অন্ত সমগ্র চরাচর কৃতজ্ঞ তোমার কাছে,
ধন্য সম্পর্ক ধন্য
আলো বাতাস আকাশ মহাকাশ
কৃতজ্ঞ তোমার জন্য।
আনন্দধারার অদৃশ্য মহিমাতেও
তুমি বিরাজমান,
অগণিত অনুগামীর মনের মণিকোঠায়
তুমি প্রেরণার যাদুকাঠি,
অন্ধজনের তুমি প্রেরণার লাঠি।
খাদ্য অন্বেষণে পাখিরা দিনভর
পরিভ্রমণ শেষে সন্ধ্যায় নীড়ে ফেরে
তোমারি প্রেরণায়,
যাদের প্রেয়সীরা থাকে অধীর অপেক্ষায়।
আমার মন মুসাফির তুমি,
তোমার সৌজন্যেই গড়ে চলেছি
সম্পর্কের সেতু নিরলস,
ইতর প্রাণী সবার তুমি প্রেরণার আকাশ।
___________________________


